নিরাপদ সবজি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সাফল্য

admin
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০ ২:১১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে চায় চরফ্যাশন উপজেলার নিরাপদ সবজি গ্রামের চাষিরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর জন্য রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়াই সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন করছেন বিষমুক্ত শাকসবজি। উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের চর ফকিরা, আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ, জিন্নাগড় ইউনিয়নের উত্তর মাদ্রাজ ও এওয়াজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এওয়াজপুর গ্রামের কৃষকরা নিরাপদ সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছে। ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের চারপাশে ছোট ছোট শাক সবজির খামার সবুজে আচ্ছাদিত।

চাষিরা জানান, কীটনাশক ব্যবহার করে সবজি চাষ করে নিজের পরিবারসহ মানুষকে বিষ খাওয়াতে চাই না। তাই কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ করছি। যা বাজারে বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি। নিজেরাও খেয়ে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছি।

হালিমাবাদ গ্রামের নিরাপদ সবজি খামারের উদ্যোক্তা আকতার মহাজন (৩৫) জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে বিষমুক্ত সবজি চাষের আলাপ করলে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন। এরপর থেকেই নিরাপদ সবজি খামারে রাসায়নিক বালাইনাশক স্প্রে ব্যবহার বন্ধ করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় নিধন ও জৈব সারের ব্যবহার করে বিষমুক্ত লাউ, করলা, বেগুন, চিচিঙ্গা, শসাসহ শাকসবজি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করছি।

চর ফকিরা গ্রামের জসিম উদ্দিন (৪০) জানান, ভারমি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ নিধন করছি। যা আগে কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করে নিধন করা হত। বর্তমানে আমাদের খামারে কোনো প্রকার কীটনাশক স্প্রে করা হয় না। খামারে প্রাকৃতিকভাবেই লাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো শিম, বরবটি, করলা, পেপে, বেগুন উৎপাদন করছি।

উত্তর মাদ্রাজের সবজি খামারের উদ্যোক্তা ফারুক (৪০) বলেন, আগে হাইব্রিড জাতের সবজি চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করতাম। যার মাধ্যমে অনেক বছর যাবত হাইব্রিড সবজি চাষ করেছি। ফলন বেশি হলেও পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হত। যা আগে জানতাম না। বর্তমানে আমরা ছালিমাটি ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় নিধন করি। উৎপাদন বাড়াতে কম্পোস্ট সার ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশ দূষণ কমছে।

বাজারের সবজি ক্রেতা পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো.রিশাদ বলেন, বিষমুক্ত শাকসবজি খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়। তবে হাইব্রিড ও সার দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি খেয়ে কোনোও তৃপ্তি পাওয়া যায় না। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এবং ক্রয়ে একটু খরচ বেশি।

উপজেলার পরিবেশকর্মী তৌকিদ আহমেদ সাব্বির জানান, জৈব পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষাবাদ করতে আগ্রহী চাষিদের কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি এনজিও সংস্থাগুলো যদি প্রশিক্ষণ দিতেন এবং বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদে স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে বেঁচে যেত আমাদের সুন্দর পরিবেশ ও প্রকৃতি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ শাকসবজি চাষ হচ্ছে। উপজেলার ২১টি ইউনিয়নেই এ ধরনের বিষমুক্ত ও জৈব পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।