বুধবার শিশু একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহীয়সী নারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বেগম রোকেয়া পদক। ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা – পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই তাদের পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ না দিলে সমাজও এগোতে পারবে না; খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। গতকাল বুধবার বেগম রোকেয়া দিবসে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকার জন্য পাঁচজনকে চলতি বছরের বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হয়। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা চাই আমাদের দেশের মেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাক। বেগম রোকেয়াই আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, তৎকালীন সমাজের অচলায়তন ভেদ করে বেগম রোকেয়া নারীদের আলোর পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি সমাজে একটা বিবর্তন
নিয়ে এসেছিলেন। নিজের উদ্যোগে, অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে তিনি এ দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে আসেন এবং তাদের শিক্ষায় আলোকিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া তার ভাইয়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন; পরে স্বামীর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নারীদের স্কুলে আনতে গেলে সেই সময় অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হতো তাকে। কাজেই কষ্ট করে তিনি শিক্ষার আলোটা জ্বালিয়ে দিয়ে যান আমাদের জন্য। এ জন্য আজকে আমরা বলতে পারি- মেয়েরা অনেক সুযোগ আমরা পেয়েছি।’
সমাজে নারীর ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে নিজের মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার মা সারাজীবন আমার বাবার পাশে থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। যখন আমার বাবা জেলে থাকতেন, তখন দল গঠন থেকে শুরু করে আন্দোলন-সংগ্রাম করা বা তার মামলা-মোকদ্দমা দেখা; আমাদেরকে মানুষ করা, লেখাপড়া শেখানো- সব দায়িত্ব কিন্তু আমার মা নিজে করেছেন। কাজেই সেখানেও আমি দেখি সমাজে কত বড় দায়িত্ব তিনি পালন করে গেছেন! অথচ কোনো প্রাতিষ্ঠনিক শিক্ষার সুযোগ তার ছিল না। কারণ সেই যুগে মেয়েরা একটু বড় হলে আর তাদেরকে স্কুলে যেতে দেওয়া হতো না; পড়তে দেওয়া হতো না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমার মা খুব জ্ঞানপিপাসু ছিলেন এবং নিজের চেষ্টায় তিনি অনেক লেখাপড়া করতেন। আমাদেরকে সব সময় লেখাপড়া করতে উৎসাহিত করতেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে সে সমাজের নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পরপরই সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখার মতো নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর এ জন্যই বাংলাদেশে আজ নারীর ক্ষমতায়নে এই ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে।
এবার নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য কর্নেল ডা. নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফী এবং নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এবার রোকেয়া পদক পেয়েছেন।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদকজয়ীদের হাতে সম্মাননা, সনদ ও চেক তুলে দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
ধরিত্রী বাঁচাতে শক্তিশালী বৈশ্বিক জলবায়ু জোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ধরিত্রীকে বাঁচাতে শক্তিশালী বৈশ্বিক জলবায়ু জোটের জরুরি প্রয়োজন। তিনি বলেন, শতাব্দীর মধ্য ভাগের আগে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কার্যকরভাবে হ্রাস করে কার্বন ভারসাম্যতা আনার দিকে এগিয়ে যেতে ইতিবাচক ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জলবায়ু জোটের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে।
প্যারিস চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘থিম্পু অ্যাম্বিশন সামিট’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে আগেই রেকর্ড করা এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে লাখ লাখ মানুষকে জলবায়ু উদ্বাস্তু করে তুলেছে। আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে আপনাদের জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারি আমাদের দেখিয়েছে, একটি মহামারি কত দ্রুত একটি বিপর্যয়কর বিশ্ব সংকটে পরিণত হতে পারে। এটি আমাদের শিখিয়েছে যে, জোরালো সম্মিলিত উদ্যোগই বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবিলার একমাত্র উপায়।’
জলবায়ুজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রের স্তর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে উপকূলীয় এবং ছোট দ্বীপগুলোর লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কোনো অবদান না থাকলেও মোকাবিলা করার সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
অন্যদের মধ্যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শেরিং, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং কপ-২৬ চেয়ার অলোক শর্মা এবং ইউএনএফসিসিসির নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিশিয়া এসপিনোসা প্রমুখ সম্মেলনে ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন উন্মোচন :প্রধানমন্ত্রী গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উন্মোচন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।