নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ থাকা ২৫টি পাটকল নতুন আকারে (গ্রিনফিল্ড) হস্তান্তর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। এক্ষেত্রে কারখানাগুলোয় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে পুনঃচালুর জন্য সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণে সর্র্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিজেএমসি বলছে, কারখানাগুলো পাট ও এ সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া চাকরিতে অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীদের অগ্রধিকার থাকবে।
সম্প্রতি বন্ধ ঘোষিত ২৫টি পাটকলের শ্রমিক অবসান পরবর্তী মিল ও বিজেএমসির অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা এবং কৌশল সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণী কমিটির সভায় বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বৈঠকে উদ্যোক্তারা তাদের মতামত প্রদান করেন। ওই সভার কার্যবিবরণী গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান, অর্থসচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্পসচিব, বিজেএমসি চেয়ারম্যান প্রমুখের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
সভার শুরুতেই পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানান, গত ৫ আগস্ট কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বন্ধ পাটকলগুলো দ্রুত সময়ে চালুর জন্য পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী উদ্যোক্তাদের সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ২৫ জন প্রথিতযশা উদ্যোক্তা মিল পরিদর্শন করেছেন।
বৈঠকে রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মো. ফজলুর রহমান বলেন, বন্ধ পাটকলগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ যন্ত্রপাতি অকেজো। এ জন্য নতুন করে যন্ত্রপাতি স্থাপন ছাড়া কারখানাগুলো চালু সম্ভব নয়। তাই লিজ দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পেতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। কারখানা চালুর ক্ষেত্রে পুরনো শ্রমিক নিয়োগের কোনো শর্ত থাকলে তাও স্পষ্ট হতে হবে।
উত্তরা জুট মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান জি এল মোদী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি লিজ ছাড়া কোনোভাবেই কারখানা চালু করা সম্ভব হবে না। বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে এগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন বিকল্প বিনিয়োগের।
বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো যন্ত্রপাতি সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া কারখানাগুলোর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। এগুলোর আধুনিকায়নে ২০০-৩০০ কোটি টাকা দরকার। কারখানাগুলো চালুর ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
বিজেএসএর চেয়ারম্যান বলেন, অধিকাংশ কারখানার ছাদ ও মেঝের অবস্থা খারাপ। মিলে কোনো জেনারেটর নেই। বর্তমান যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি। দক্ষ জনবল তৈরিতে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাদ মিলস অ্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ মহসিন বলেন, কারখানাগুলোকে পাটের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে কাজে লাগানো যেতে পারে। উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ সুবিধা প্রয়োজন। একই সঙ্গে মিলের অপব্যবহার রোধে প্রয়োজন তদারকি জোরদার।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, অর্থায়নে ব্যবহার করা যেতে পারে পুঁজিবাজারকে। কারখানাগুলোকে বর্তমান রূপে ব্যবহারযোগ্য, বিএমআরইর মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য এবং নতুন যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিচালনা করা যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বন্ধ পাটকলগুলো পুনঃচালুর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। এগুলোকে তিনভাগে এখনই চালু, মধ্য মেয়াদে চালু এবং এখন চালুর সুযোগ নেই ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিদেশি অর্থায়ন করা যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।