দুই দেশের সম্পর্কের মাইলফলক

admin
মার্চ ৩০, ২০২১ ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্কের জন্য মাইলফলক। ’৭১ সালের মতো বাংলাদেশের আগামীর উন্নয়ন অভিযাত্রায় পাশে দাঁড়াবে ভারত। সফরকালে এমন প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে। ফলে এই সফরের মাধ্যমে সম্পর্কের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। মোদির সফর সম্পর্কে বিশিষ্টজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
মোদির সফর ঐতিহাসিক সম্পর্কে যুক্ত: শমশের মোবিন চৌধুরী
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মোবিন চৌধুরী বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচজন নেতা এবার বাংলাদেশ সফর করলেও মোদি এসেছেন স্বাধীনতা দিবসে। তিনি আমাদের উদযাপনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন। এটা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কারণে হয়েছে।
তিনি বলেন, মোদি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়েছেন। এই প্রথম কোনো দেশের শীর্ষ নেতা টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়েছেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে শমশের মোবিন চৌধুরী বলেন, কয়েকটা এমওইউ সই হয়েছে। নতুন ট্রেনের ঘোষণা এসেছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তার জন্য টাস্কফোর্স করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগ মোকাবেলা এবং বৃত্তি ঘোষণাও সার্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এগুলোর প্রতীকী মূল্য আছে।
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সম্পর্কে তিনি বলেন, সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এটা ইতিবাচক। তবে নদীর পানির অভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হতে পারেনি। যদিও হত্যা শূন্যের কোঠায় নামানোর অঙ্গীকার রয়েছে। সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের কাছে খুব স্পর্শকাতর। কারণ এতে জনগণের জানমাল জড়িত। এ ব্যাপারে দুপক্ষকে বসে সমাধান অবশ্যই বের করতে হবে।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করাই চ্যালেঞ্জ: তৌহিদ হোসেন
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় তিস্তা চুক্তি সম্পাদন এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। ভারত যথারীতি এসব প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এসব প্রতিশ্রুতি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করাই এখন সবার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের ফলাফল বিশ্লেষণ করে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উৎসবে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এসব সফর একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়নি। পাঁচটা আলাদা সফর হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সফর হয়েছে। এ সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অমীমাংসিত বিষয়ে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি হবে একথা আমরা কখনই বলিনি। এমন কোনো প্রত্যাশাও আমাদের ছিল না।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের দিকে যদি তাকাই তবে আমরা বলব এই সফরেও বড় অগ্রগতির আশা করিনি। বড় অগ্রগতি করতে হলে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে আরও দৌড়ঝাঁপ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমরা শুধু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফর করতে দেখেছি। এটা স্বাভাবিক সফরের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন। মূলত উৎসবকে ঘিরে সফরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের সামনে বড় ইস্যু। তিস্তা চুক্তি আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে। পশ্চিমবঙ্গে এখন নির্বাচন চলছে। ফলে এ সময়ে মমতা ব্যানার্জি আপত্তি প্রত্যাহার করবেন না এটা সবাই বোঝেন। তিস্তায় রাজি হলে মমতার ভোটে হারার ভয় থাকে।
বিজেপি সেখানে লড়াই করছে। ফলে তারাই বা কেন এ সময়ে তিস্তায় রাজি হবে। বাস্তবে মোদির এবারকার সফরে তিস্তা চুক্তির আশা ছিল না। ফলে চুক্তি না হওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, মোদির এবারের সফরে তিস্তা, রোহিঙ্গা, সীমান্ত হত্যা এসব ইস্যু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ তুলেছে। ভারতও তাদের পূর্বের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু আলোচনা করেছেন। এ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। সমস্যার সমাধান হবে স্বাভাবিক গতিতে যদি প্রতিশ্রুতি পূরণে মাঠপর্যায়ে যথাযথ বাস্তবায়ন হয়।
করোনার টিকা গুরুত্ব পেয়েছে আলোচনায়: ড. ইমতিয়াজ আহমদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমদ বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করোনার টিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। টিকাকে কূটনীতির বিষয় করা হবে না বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সফরটা মূলত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ৫০ বছর এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ঘিরে। এই সময়ে বড় কিছু আলোচনায় আসার কথা ছিল না। তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের ইস্যুগুলোর সমাধান সময় সাপেক্ষ।
নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কারণ একাত্তর সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল।
তিনি বলেন, মোদির এবারকার সফরের সময়ে কর্মসূচিতে কিছুটা তার রাজনীতির সংযোগ ছিল। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন ঘিরে এই সংযোগ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন কিছু করার ছিল না। মোদির সফর ঘিরে বাংলাদেশে বিক্ষোভে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এটা দুঃখজনক। মিত্র দেশ ব্রিটেনে ট্রাম্প সফর করতে গেলে সেখানেও বিক্ষোভ হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ১০ জন মারা যাওয়া সত্যি অনাকাঙ্ক্ষিত।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদ বলেন, দুই দেশের সম্পর্কটাকে জনগণের পর্যায়ে বিস্তৃত করতে হবে। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। সেই ধারায় সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে।