তৃণমূলের কমিটিতে মাইম্যান রাখায় ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রীর ; বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠনের নির্দেশ

admin
অক্টোবর ৪, ২০২০ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ছবি-সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে অনুমোদনের জন্য জমা পড়া জেলা মহানগরের ২৫ থেকে ২৮টির মতো কমিটি ফেরত দেওয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের দলের সিনিয়র অনেক নেতাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, আর জামায়াত, বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির নেতাকর্মীদের কমিটিতে অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে।’ জামায়াত বিএনপির অনুপ্রবেশ, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী বিতর্কিতরা স্থান পাওয়ায় এগুলো পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলনে যাঁরা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন তাঁদের মূল্যায়ন এবং পুরনো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের কমিটিতে যুক্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি সভার শুরুর দিকেই ঢাউস আকারের দুটি ফাইল এনে টেবিলে নিজের সামনে রাখেন। এরপর তা থেকে একে একে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাঠ করে শোনান তিনি। এসব জেলায় আওয়ামী লীগের পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে কোথাও জামায়াতবিএনপির সাবেক নেতাদের, আবার কোথাও দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, বিতর্কিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি ২৫ থেকে ২৮টির মতো জেলা মহানগর কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে ফেরত দিয়ে সেগুলো থেকে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, ‘নেত্রী যে কমিটিগুলো ফেরত দিয়েছেন সেগুলোর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা বসে পুরনো নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুনভাবে কমিটি করবেন। দরকার হলে তাঁরা কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বসবেন। এরপর নতুন কমিটি করে জমা দেবেন।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সভায় আট বিভাগে আওয়ামী লীগের আটটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। টিমগুলো এখন থেকে বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে। সভায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি যাচাইবাছাই শেষে শিগগিরই ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক তাঁদের বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কমিটির বিষয়ে বক্তব্য দেন। সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য তাঁদের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অবহিত করেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে কথা বলেন দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটিতে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক বেশ কিছু সম্পাদকীয় পদে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাঁরা অনেকেই ঢাকার ভোটার নন। ভোটের সময় তাঁদের পাওয়া যায় না। এতে ভোটের সময় সংকট সৃষ্টি হয়। তিনি কমিটিতে ঢাকার ভোটারদের প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব করেন। সময় শেখ হাসিনা বলেন, স্থানীয় ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি করতে হবে।

বৈঠকে গাজীপুর মহানগর কমিটি গঠনে যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের নির্বাচনী এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ড থাকলেও তার মতামত নেওয়া হয়নি বলে আলোচনা হয়। মহানগর এলাকার বেশির ভাগ রাসেলের নির্বাচনী এলাকায় হলেও তাকে জিজ্ঞেস না করেই কমিটি গঠিত হয়। বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর মহানগর নেতাদের জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে বসে সমন্বয় করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ঢাকা হলো সবচেয়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিভাগ। বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশি সমস্যা রয়েছে। কোনো একটি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। ভবিষ্যতে কমিটি গঠনে জেলা ছাড়া যেন কমিটি না হয় সে বিষয়ে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সময় শেখ হাসিনা তৃণমূলের জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ অন্যান্য কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনের নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কে কোথায় কী সমস্যা ফেস করছে তা আমাকে অবহিত করবে। দলে সেক্রেটারি আছে, তাকে জানাবে। তৃণমূলে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষকে দলে টানতে হবে।

মাই ম্যানকমিটি গঠন করা যাবে না : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি সাংগঠনিক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত নিবেদিত নেতাকর্মীরা যাতে বাদ না পড়েন সেদিকে লক্ষ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটিগুলোতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হলেই নিজেদের লোক দিয়েমাই ম্যান’ (নিজস্ব বলয় সৃষ্টির জন্য) কমিটি গঠন করা যাবে না। কাউন্সিলে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁরা প্রার্থী ছিলেন তাঁদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন পরীক্ষিতদের কমিটিতে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বিতর্কিতদের দলে আশ্রয়প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। তৃণমূলের সব কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠন করতে হবে। কারণ সম্মেলন ছাড়া কমিটি হলে লবিং বা তদবিরের লোক নেতা হন।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট ৩৩ জনকে গতকালের সভায় ডাকা হয়। তবে প্রত্যেকে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসার পরই সভায় যোগদানের অনুমতি পান।