তালিকা হচ্ছে হেফাজত-জামায়াতকে সহায়তাকারী ব্যবসায়ী আমলাদের

admin
এপ্রিল ২৫, ২০২১ ৮:১১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সহিংসতা ও নাশকতায় জড়িত হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবার তাদের ‘ইন্ধনকারী ও অর্থদাতাদের’ খোঁজা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে হেফাজত, জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে অর্থদাতা ব্যবসায়ী, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আমলা এবং পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে।কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী আছেন সন্দেহের তালিকায়। নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সম্পৃক্ততা ‘গুরুতরভাবে’ আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সরকারের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তাদের মতে, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন কর্তব্য পালনে কতটা সঠিক ভূমিকা রাখছে তা-ও দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কতটা নির্ভরশীল থেকে কাজ করছেন তাও দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, হেফাজতের তান্ডবকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় সোনারগাঁ থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতের বিতর্কিত নেতা মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত এএসআই গোলাম রাব্বানীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। নজরদারিতে রয়েছেন সরকারি আমলা-পুলিশ সদস্যসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াত সম্পৃক্ততা দেখা হচ্ছে।সূত্রটি বলছে, ওই ব্যবসায়ীদের অনেকে আগে প্রকাশ্যে বা গোপনে জামায়াত-বিএনপিকে অর্থ দিতেন। এখন গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে হেফাজতকে সহায়তা দিয়ে আসছেন। এসব ব্যবসায়ীর ফোন কললিস্ট, ব্যাংক হিসাব এবং কারও কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো চেক-ক্রসচেক করা হচ্ছে। অর্থ জোগান অথবা নাশকতায় ইন্ধন দেওয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী দুই বছর তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালে সারা বিশ্ব যখন স্থবির তখন বাংলাদেশ মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। সবকিছু যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাভাবিক চলছিল, তখন হঠাৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম দেশের মধ্যে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে ঠুনকো অজুহাতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে সামনে রেখে হেফাজতে ইসলাম এই তান্ডব শুরু করে। তারা গত ২৬ মার্চ থেকে তিন দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা করেছে। হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের থানা আক্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানি হয়েছে কমপক্ষে ১৭ জনের। মূলত সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই এই তান্ডব বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জে একটি রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে আটক হন। এ ঘটনায় ওই রিসোর্টে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়। স¤প্রতি হেফাজতের তান্ডব এবং ২০১৩ সালে মতিঝিলের তান্ডবের ঘটনায় নাশকতাকারী হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের পর ভয়াবহ তথ্য বের হয়ে আসছে। ওই সময়ে বিএনপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক, ব্যবসায়ীদের অর্থ জোগানসহ নাশকতায় ইন্ধন দেওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসছে। রয়েছে পুলিশ ও আমলাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ।
সূত্রটি বলছে, একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও আমলা রয়েছেন যারা সব সময় সরকারি দল করেন। তারা বিগত সময়ে কিংবা তিন বছর আগেও প্রকাশ্যে বিএনপি-জামায়াতকে অর্থ জোগান দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের ভিত মজবুত হওয়ায় তারা গোপনে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামকে অর্থ দিয়ে থাকেন। কারণ সরকার অস্থিতিশীল থাকলে তাদের লাভ হয়। সে কারণেই এখন হেফাজতের ওপর ভর করেছে। তাই অর্থ দিয়ে তান্ডব সৃষ্টি করা এবং দেশের আলেম সমাজকে আওয়ামী লীগ সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার খুব সতর্কভাবে সবকিছু সামাল দিতে চায়। এ জন্য এসব ইন্ধনদাতার খোঁজ করা হচ্ছে। এদিকে শুধু ব্যবসায়ী ও আমলারাই নন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রিসোর্ট কান্ডে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার ইন্ধন রয়েছে বলে একাধিক সংস্থার হাতে তথ্য এসেছে। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই হেফাজত ঘেঁষা। স্থানীয় হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামীর প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলে সোনারগাঁ পৌরসভার আমিনপুর মাঠে এক সমাবেশে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে উদ্দেশ করে বলেছেন, মি. ম্যাক্রোঁকে সামনে পেলে তিনি হত্যা করতেন। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এ বক্তব্যের ১৩ মিনিটের একটি ভিডিও তার ফেসবুক পেজে আপলোড করেছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে লিয়াকত হোসেন খোকা বলছেন, ‘আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আজকে আমার প্রিয় নবী সম্পর্কে যারা কটূক্তি করবে, ব্যঙ্গ করবে, আমি মুসলমান হিসেবে বলতে চাই, আমি কোনো সংসদ সদস্য না এখন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীকে (প্রেসিডেন্ট) বলতে চাই, আজকে তুই যদি আমার সামনে থাকতি, আমি তোকে হত্যা করতাম। হত্যা করে আমি ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে যেতাম।’