পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের উদ্যোগ
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। এর বাইরে আরও ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে চলতি মূলধনের জোগান দেওয়ার জন্য। এছাড়া থাকবে সহজ শর্তে পরোক্ষ ঋণ বা এলসি খোলা ও ব্যাংক গ্যারান্টির আর্থিক সুবিধা। জাহাজ শিল্পকে চাঙা করা, এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানো ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, জাহাজ নির্মাণ খাতে ঋণের জোগান বাড়াতে সম্প্রতি এ খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হয়েছে। এর আলোকে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এর আলোকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।
আরও জানা গেছে, জাহাজ নির্মাণ খাতের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে এ খাতেও সহজ শর্তে ৪ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জোগান বাড়াতে উল্লিখিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হবে। ঋণের মেয়াদ হবে ২০ থেকে ২৫ বছর। এর সঙ্গে চলতি মূলধনের জোগান দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে আরও ৪০০ কোটি টাকার মতো রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এর বাইরে জাহাজ নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলাসহ আনুষঙ্গিক খাতে এলসি খোলা ও প্রয়োজনীয় ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এটি হবে একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল। এ খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন করা হবে। সুদসহ ঋণ আদায়ের মাধ্যমে তহবিলের আকার বাড়বে। এভাবে তহবিলটি চলতে থাকবে।
আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি এ খাতের জন্য কর অবকাশ সুবিধাও দেওয়া হবে। যাতে উদ্যোক্তারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয়। একই সঙ্গে এ শিল্পের বিকাশের কারণে যাতে পরিবেশগত কোনো সমস্যা না হয় সেদিকেও নজর রাখা হবে।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে প্রথম দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ হতে শুরু করে। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মুদ্রানীতিতে এ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। পরে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তা স্থবির হয়ে যায়। এ খাতের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে এখন আবার নতুন উদ্য্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ভাটিয়ারী, আনোয়ারায় জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের কেরানীগঞ্জ এলাকায়ও শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে অনেক জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এসব শিল্প থেকে নির্মাণ করা জাহাজ যেমন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, তেমনি দেশের ভেতরেও চলাচল করছে। ২০০৮ সালের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪০টি জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছে। এ খাতে আয় হয়েছে ১৮ কোটি ডলার।
উন্নত দেশগুলো এখন জাহাজ তৈরি করছে না। তারা এখন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করছে। এ কারণে ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নেওয়া হয়েছে এসব উদ্যোগ। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ খাত থেকে ৪০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান। বর্তমানে এ খাতে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে তা বেড়ে ১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হবে দক্ষ জনশক্তি।
বর্তমানে দেশে ১২০টি শিপইয়ার্ড রয়েছে। যেগুলোতে জাহাজ নির্মাণসহ সংস্কারের কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের শিপইয়ার্ডগুলোতে দেশের ভেতরে চলাচলের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাহাজ ও বড় বড় লঞ্চ তৈরি হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের শিপইয়ার্ডগুলোতে তৈরি হচ্ছে সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী জাহাজ।