জনতার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিয়ে পালিত হল ভাওয়াল বীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৭০ তম জন্মদিন

admin
নভেম্বর ৯, ২০২০ ৯:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রয়াত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি।

প্রয়াত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি।


টঙ্গী (গাজীপুর): দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৭০ তম জন্মদিন উপলক্ষে টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চেরাগআলী ট্রাক স্ট্যান্ড মাঠে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াত এই ভাওয়াল বীরকে স্মরন করে জনসমুদ্রের এই সভা ফুটিয়ে তুলেছে জনতার-ই শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এম‌পির সু‌যোগ‌্য সন্তান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেছেন, “যতদিন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের রক্ত আমাদের দেহে আছে কোনো অন্যায় আমরা করবো না। আহসান উল্লাহ মাস্টারের আদর্শের কর্মীরা দলের সঙ্গে কখনো বেঈমানি করবেনা।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত সরকারের ঘাতকরা ভেবেছিল গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার প্রতিটি ঘরে তার আদর্শের কর্মী জন্ম দিয়ে গেছেন।”

দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহন করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।


১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুর জেলার পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঐ স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ঘটে আহসানউল্লাহ মাস্টারের। ১৯৬২-এ হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি চালিয়ে যেতে থাকেন। রাজনীতির লড়াকু সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে উঠতে থাকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৮৩ এবং ১৯৮৮ সালে পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য। আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯০, ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক পটভূমিতে শ্রমজীবী নেতা হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গী, তাঁর নিজ বাসভবনের সামনে, নোয়াগাঁও স্কুল মাঠে জনসভা চলাকালে দিনেদুপুরে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীর গুলিতে প্রাণ হারান গাজীপুরের কৃতি সন্তান আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি।

আলোচনা সভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ছবি: সংগৃহিত

আলোচনা সভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ছবি: সংগৃহিত


টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজব আলীর সঞ্চালনায় আজকের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, আসাদুর রহমান কিরণ, কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নীলিমা আক্তার লিলি, জাহিদ আল মামুন, কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম নূরু, নাসির উদ্দিন মোল্লা, সাবেক কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, হাজী মো. মামুন, কাউছার আলম, তাঁতী লীগ নেতা শাহ আলম প্রমুখ।

এছাড়াও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রেজাউল করিম, টঙ্গী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুর সহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতাকর্মী গণ।

পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।

এছাড়াও জন্মদিন উপলক্ষে টঙ্গী-গাজীপুরে দলীয় ও পারিবারিক ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি জানান, জন্মদিন উপলক্ষে আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি’র জন্মস্থান গাজীপুরের হায়দ্রাবাদে সকাল থেকে কোরানখানী, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।