অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার মধ্যে দেশটির সঙ্গে উন্নত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-চীন উন্নয়ন সহযোগিতা : অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা চীনা বিনিয়োগকারীদের চাহিদা জানতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৮০০ একর জমিতে চীনা ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে। তিনি পারস্পরিক সুবিধার জন্য চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বেসরকারী খাত থেকে চীনাদের চাহিদা মাফিক পণ্য ও সেবা রফতানি করতে চীনের সঙ্গে আমরা আরও নিবিড়ভাবে কাজ করছি। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া ও পলিসি শেয়ার করছি। তিনি আরও বলেন, ফিরিয়ে নেয়ার সুবিধা (বাই ব্যাক ফ্যাসিলিটি) দেয়ার মাধ্যমে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগ আনতে আমরা চীনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। চীনের সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ছে বাংলাদেশে। এ সবই দুই দেশের সম্পর্কের প্রকাশ। শাহরিয়ার আলম বলেন, চাইনিজ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮শ একর জমি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষ শ্রম থাকায় চীনারা উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ করছে। সর্বশেষ গত দুই বছরে চীন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় উৎপাদনমুখী কারখানা গড়েছে। আমরা আশা করছি চীনাদের তৃতীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হবে বাংলাদেশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নের অংশীদার। গত এক বছরে চীন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি এবং ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে চীনে। এ জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। চীনে আরও বেশি পণ্য রফতানির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে চীন। চীন বাংলাদেশহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ তহবিল দিয়েছে চীন। এ সব দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চীন যৌথভাবে কাজ করায় সবাই সুবিধাভোগী। অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাড়া চীনের এসব কাজের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল আনম মুনিরুজ্জামান এনডিসি, পিএসসি (অব.), ইনস্টিটিউট ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, ইউনান সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমি, কুন্মিং চীনের অধ্যাপক চেং মিন এবং চীনের বেইজিংয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজ ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. ওয়াং শিদা অলোচনায় বক্তব্য দেন।