ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে চাই

admin
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০ ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা দেশে একটি ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। আপনাদেরকেই এ শুদ্ধাচারের পরিকল্পনা করতে হবে এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায় সেই উপায় বের করতে হবে।

বৃহস্পতিবার অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স অ্যাগ্রিমেন্ট (এপিএ)-২০২০ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুদ্ধাচারের পরিকল্পনা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাতে ও তা সফলভাবে কার্যকর করতে হবে। আর যারাই এটা করতে পারবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যখন কোনো কাজ করবেন, তখন তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করবেন। কে কি বলল বা কে কি লিখল সেদিকে কান দেবেন না। এসব দিকে কান দিলে কোনো কাজই করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, কিছু মানুষের স্বভাবই হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা। তারা সামান্য ভুল হলেই অনেক কিছু বলেন (পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনা করেন)। কিন্তু তারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজেরা কিছুই করেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরাই অনেক টিভি চ্যানেলকে অনুমোদন দিয়েছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছি। আর ওই সব চ্যানেল সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের (সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী) আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঠিক কাজটি করে যেতে হবে। যদি আপনাদের আত্মবিশ্বাস থাকে যে আপনারা যা করলেন তাতে জনগণের কল্যাণ হবে এবং জনগণ এর সুফল ভোগ করবে, তবে আমি বলতে চাই আপনারা তাই করুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলে তাদের পাশে থাকা আমাদেরও দায়িত্ব। আমরা জনগণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। আর যারা সরকারি চাকরি করেন তারাও জনগণের সেবা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোভিড-১৯ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন। কিন্তু এ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটা মাথায় রাখতে হবে যে- চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীরা কাজ না করে বসে থাকেননি, তারা নিরলসভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করেছেন। অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি, প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং দুর্যোগপূর্ণ সময়ে জনগণকে সাহায্য করেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মহামারীর কারণে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নমূলক কাজের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। সন্দেহ নেই যে আমরা যেভাবে এগিয়ে চলছিলাম তাতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের এ বাধা অতিক্রম করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যা দেশের জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের আগে কোনো দেশই এ জাতীয় প্যাকেজ ঘোষণা করেনি এবং এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। যেখানেই প্রয়োজন সেখানে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি হাত খুলে নগদ অর্থ সরবরাহ করেছি। ফলস্বরূপ আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সরকার এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ সম্পন্ন করছে। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। কখনই পিছিয়ে পড়বে না।

সফলভাবে এপিএ কার্যকর করার জন্য সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে একটি চমৎকার কাজ করেছে যা বিশ্বে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। যারা এ কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই যে আপনারা সেভাবে কাজ করবেন যাতে আগামী দিনগুলোতে আরও পুরস্কার অর্জন করতে পারেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিদ অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এপিএ স্বাক্ষর করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এপিএ বাস্তবায়নে সেরা কর্মসম্পাদক হিসেবে স্বীকৃতিসহ ক্রেস্ট এবং প্রশংসাপত্র পেয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেরা কর্মসম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছে। এছাড়া আরও সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এপিএ বাস্তবায়নে তাদের অসামান্য কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রশংসাপত্র লাভ করেছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হল- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণী মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে সততা প্রয়োগের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মো. রহমতুল মুনিম শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সাফল্যের সঙ্গে জাতীয় অখণ্ডতা কৌশল প্রয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেরা হিসাবে স্বীকৃত পেয়েছে, অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে দ্বিতীয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়কে তৃতীয় সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এপিএ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অসামান্য কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে ক্রেস্ট এবং প্রশংসাপত্র হস্তান্তর করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বক্তব্য দেন।