ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলো থেকে অবিলম্বে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব রকম ট্যাক্স, ভ্যাট, অন্যান্য রাজস্ব আদায়সহ পাঁচ দফা নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসিসহ সংশ্নিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এই রায় দেন। এর ফলে অনলাইনভিত্তিক এ খাত থেকে বাংলাদেশ বিপুল রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন রিটকারীর আইনজীবীরা।
গুগল, ফেসবুকসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, জনস্বার্থে করা রিট পিটিশনের আদেশের পর দীর্ঘ আড়াই বছর পেরুলেও সরকারি দপ্তরগুলো তেমন কোনো সাফল্যজনক রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই রায় বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের রাজস্ব আদায়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। কারণ প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা এই কোম্পানিগুলোকে দেশ থেকে পরিশোধ করা হয়। পরে রায়ে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
রায়ের অপর চার নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ থেকে গত পাঁচ বছরে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে আনুপাতিক হারে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে হবে। রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রতি ছয় মাস পর পর হলফনামা আকারে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে, এই রায় একটি চলমান আদেশ বা কন্টিনিউয়াস ম্যানডেমাস হিসেবে বলবৎ থাকবে এবং এ রায় বাস্তবায়নে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে দেশের যে কোনো নাগরিক যে কোনো সময় আদালতে আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার, ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের, ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদুল ইসলাম।
সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি নিয়ে ২০১৮ সালে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে এ প্রতিবেদন সংযুক্ত করে একই বছরের ৯ এপ্রিল জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরসহ সাত আইনজীবী। অন্যরা হলেন- মোহাম্মদ কাওসার, আবু জাফর মো. সালেহ, অপূর্ব কুমার বিশ্বাস, মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের। পরে ওই বছরই হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রোববার ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ এ ধরনের বিভিন্ন মাধ্যম এখন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। এ সুযোগে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সরকার এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না। এ প্রেক্ষাপটে রিটটি করা হয়েছে। এ খাত থেকে বাংলাদেশ বিপুল রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।