সরকারের হস্তক্ষেপে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া আলুর দাম এখন কমতে শুরু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ কমসহ নানা অজুহাত দেখিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে এ পণ্যের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়।বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে দেখা গেছে এমন চিত্র।
আলু ব্যবসায়ী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ আলুর দাম দ্বিগুণ বেড়ে ৬০ টাকায় ওঠে। পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বেঁধে দেয়। তা কার্যকর করতে পারেনি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) আবারো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। এবার দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ টাকা। এরপর থেকে বাজারে আলুর সরবরাহ বাড়তে থাকায় দামও কমছে। এখন পর্যন্ত খুচরা বাজারে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তিন-চার দিনের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা কমেছে। এখন সরবরাহ ভালো, এটা অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমবে।
রাজধানী কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মো. হাফিজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ বাজারের একের মালের (সবচেয়ে ভালো মান) আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। এছাড়া মান অনুযায়ী ৩০ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজগুলো এখন আলু ছাড়ছে। গতকাল থেকে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে এটা অব্যাহত থাকলে সামনে দাম আরও কমবে।’
এদিকে মুগদার খুচরা ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, আলুর দাম কমেছে। তবে মিডিয়ায় যেভাবে শুনছি আলুর দাম ৩৫ টাকায় নেমে যাবে। বাস্তবে দাম এত কমেনি।
তিনি বলেন, ‘আজ আলু বিক্রি করছি ৪২ টাকায়। বাছাই আলু বিক্রি করছে হচ্ছে ৪৪ টাকায়। যেহেতু পাইকারি বাজারে দাম কমছে দু-একদিনে খুচরা বাজারে দাম আরও কমবে।’
মুগদা কাঁচাবাজারে আসা আবুল বাশার নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আলু প্রতিদিনই লাগে। প্রতি বছরই এ সময় আলুর দাম একটু বাড়ে কিন্তু ৬০ টাকা জীবনে কখনও দেখিনি, শুনিওনি। গত পরশু খবরে দেখলাম, সরকার আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু আজও বাজারে এক কেজি আলু কিনলাম ৪৪ টাকায়। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো মুনাফা লুটে, যার বলি সবসময় হয় ক্রেতা। ৬০ টাকা আলু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তাদের কিছুই হয়নি।’
এদিকে গত মঙ্গলবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। ওইদিন খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদফতরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাম নির্ধারণ করা হয়। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, কারওয়ান বাজার এবং শ্যামবাজারের আলুর পাইকার ও আড়তদাররা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদফতর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন।
মঙ্গলবার সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৩০ এবং খুচরা পর্যায়ে কেজি ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
নির্ধারিত মূল্যে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা যেন আলু বিক্রি করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে কৃষি বিপণন অধিদফতর।