আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় প্রধানমন্ত্রী
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভ্যাকসিন পেতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। তিনি বলেন, আমি এখন ঘরের মধ্যে একা তাই মাস্ক পরছি না। কিন্তু লোকজন আসলেই মাস্ক পরি। লোকজনের সামনে গেলে মাস্ক পরতে হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য সংকট যেন তৈরি না হয় এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমাদের একটি পরিকল্পনা ছিল। আমরা প্রত্যন্ত এলাকাতেও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এমনও সময় ছিল যখন হাঁচি দিলেও অনেকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেত। করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়েছে দেশেই চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব।
করোনাকালে সৃষ্ট সংকটের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশের প্রবৃদ্ধি মাইনাসে চলে গেছে, কিন্তু আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। করোনার মধ্যেও ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ছোটখাটো ব্যবসা করেও বেঁচে থাকতে পারছে।
একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে উলেস্নখ করে দলের সভাপতি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু হ
পাওয়াটা বড় নয়, বরং কী দিতে পারলাম সেটাই বড়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ বিষয়টি অনুধাবন করতে
হবে। তিনি তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ দেন।
বিএনপি মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন উপনির্বাচনে তারা প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের আগে খুব হইচই করে। কিন্তু নির্বাচনের দিন দুপুরে পরাজয়ের ভয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। মূলত নির্বাচনের প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এরকম করে।
সমালোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমালোচনা হলে ভালো, এতে সরকারের কার্যক্রমের ভালোমন্দ আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু অপপ্রচার কেন? সমালোচনায় আমাদের আপত্তি নেই, ভালো কাজ করলে সেটা একটু স্বীকার করবেন। তিনি বলেন, আপনারা যা ইচ্ছা লিখতে পারেন, এতে হয়তো পত্রিকার কাটতি বাড়বে। হয়তো এনজিওর জন্য বিদেশি ফান্ড আসবে। কিন্তু এই ফান্ড কোথায় যায় ভবিষ্যতে এটার হিসাব নেওয়া শুরু করব।
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক-ইউটিউবে গুজব আর অপপ্রচার চলছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পার্টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পার্টি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। যেকোনো অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনার বাইরে যাওয়ার আমাদের সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার আদর্শের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত। আমাদের এখনই আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, এর কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।
তিনি বলেন, দলীয়ভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে। সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে এ বিষয়ে সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহানগর-জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত ইউনিটগুলো সচেতনতা কার্যক্রম চালাবে।
দু’একদিনের মধ্যে উপ-কমিটি দেওয়া হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো একজন একাধিক পদে থাকতে পারবে না। মহানগরসহ সহযোগী সংগঠনগুলোতেও যদি কোনো ব্যক্তি সদস্য পদেও থাকে তিনি সাব-কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, আইন সম্পাদক নজিবুলস্না হিরু, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সভায় উপস্থিত ছিলেন।