আসছে অর্থবছরের বাজেটে কভিড রোধে এবং কভিডের কারণে সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভয়ংকর এই ভাইরাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে জীবনযাত্রায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সমাজকল্যাণ, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যাপক রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধিক ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে রাজস্ব মওকুফ সুবিধা থাকছে। এনবিআর থেকে করোনা রোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, সুরক্ষা পোশাকসহ ৪৬ ধরনের পণ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব পণ্য তৈরির উপাদান আমদানিতে বাজেটে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর তৈরিতে বা আইসিইউ ব্যবহারে যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়, তা আমদানিতেও রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এসব পণ্য আমদানিতে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, আগাম ভ্যাট ও অগ্রিম কর দিতে হবে না।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল প্রয়োজন হয়। আগামী অর্থবছরে এই আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল আমদানিতে শুল্ক দিতে হবে না। করোনা পরীক্ষায় দুই ধরনের টেস্ট কিট এবং ডায়াগনস্টিক টেস্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতেও শুল্ক-কর থাকবে না।
এ ছাড়া তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক, প্লাস্টিক ফেস শিল্ডস, সার্জিক্যাল পোশাক, বিশেষ ওভেন স্যুট, মেডিক্যাল প্রটেক্টিভ গিয়ার, সুরক্ষা চশমা, ডিসইনফেকটেন্টস আমদানিতে সব ধরনের রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে।
কভিড মোকাবেলায় সামনের সারিতে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই এই ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁদের অনেকে মারা গেছেন। তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতায় বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে তাঁদের যেসব সরঞ্জাম দেওয়া হবে, তা আমদানিতেও রাজস্ব মওকুফ সুবিধা থাকছে।
এনবিআর করনীতি শাখার সদস্য আলমগীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কভিড মোকাবেলা ও কভিডের ফলে সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে উঠতে সব ধরনের রাজস্ব ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভয়ংকর এ রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশি শিল্পে ব্যাপক রাজস্ব ছাড় থাকছে। করোনাকালীন সংকটে দেশের শিল্প খাত বিপর্যস্ত। বাজেটে দেশি শিল্পে গতি আনতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে গত কয়েক অর্থবছরের মধ্যে আসছে বারে শিল্প খাতে অধিক ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্কে সর্বোচ্চ রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সরকার নগদ প্রণোদনাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। শিল্পের বেশির ভাগ খাতে উৎস কর ও অগ্রিম করের হার কমানো হয়েছে। দেশি শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক-করে রেয়াতি সুবিধা থাকছে। অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। শিল্পের ১৯টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা থাকছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, কভিডের প্রভাবে শিল্প খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। লোকসান কমাতে বা কারখানা টিকিয়ে রাখতে অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। এতে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। শিল্প খাতের লোকসান কাটাতে আগামী বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়া হলে কর্মী ছাঁটাই বন্ধ হবে। কভিডের কারণে লোকসান হওয়ায় যাদের কাজ থেকে বিদায় করা হয়েছে, তাদের আবারও কাজ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
কভিডের কারণে খাদ্যসংকট যাতে না হয় সে জন্য বাজেটে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। অল্প আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য, আশ্রয় ও আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা থাকছে। কভিডের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে অন্যতম শিক্ষা খাত। বাজেটে কভিডের মধ্যেও শিক্ষা খাত সচল রাখতে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। এ খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এসব খাতেও সব ধরনের রাজস্ব ছাড় সুবিধা দেওয়া হবে।