পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ। এখন চলছে স্লাব বসানোর কাজ। স্লাবসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে ২০২২ সালেই পদ্মার এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারবে মানুষ। দক্ষিণের মানুষের এই স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি তাদের আরেকটি স্বপ্ন খুব শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে পটুয়াখালীর পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ।
করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস নির্মাণকাজে ভাটা পড়েছিল। তবে এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের জুনে সেতুটি যান চলাচলের উপযোগী হবে বলে দাবি প্রকল্প-সংশ্নিষ্টদের।
বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু ও পায়রা সেতু সমানতালে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে পটুয়াখালীর সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাগরকন্যা কুয়াকাটারসহ পুরো দক্ষিণ উপকূলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’ নির্মাণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সে লক্ষ্যে ২০১১ সালে কুয়েত সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা নদীতে নির্মিত হচ্ছে সেতুটি। এরই মধ্যে মূল সেতুর ৭৫ শতাংশ এবং পুরো প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার।
সেতুটি কেবল দিয়ে দু’পাশে সংযুক্ত করা
থাকবে। ফলে নদীর মাঝখানে একটি মাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া খরস্রোতা পায়রা নদীর তীর সংরক্ষণেও প্রকল্প থেকে কাজ চলমান রয়েছে। আটটি স্প্যান ও ২৬টি ভায়াডাক থাকবে মূল সেতুতে। এর দু’পাশে এক মিটার করে ফুটপাতের পাশাপাশি সেতুর উত্তর প্রান্তে (বরিশালের বাকেরগঞ্জ অংশ) ৩০০ মিটার এবং দক্ষিণ প্রান্তে (পটুয়াখালীর দুমকী অংশ) ৫৯০ মিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
চলতি ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কারিগরি জটিলতা এবং করোনাভাইরাসের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
শিক্ষার্থী তৃণা সরকার বলেন, যেহেতু দক্ষিণ জনপদে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ রয়েছে; সেহেতু সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত, বাণিজ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। সহজ হবে সড়কে যোগাযোগ।
বাসচালক আবদুস সালাম ও সাদেক হোসেন বলেন, সেতুটি চালু হলে যাতায়াত অনেক সহজ হবে। যাত্রীসাধারণ ও চালকদের ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। থাকবে না ফেরিতে ওঠার ঝুঁকিও। সেতুটি হয়ে গেলে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।
পটুয়াখালীর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ জনপদের শুধু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটবে না, উন্নয়ন হবে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থারও। বাড়বে কর্মসংস্থান। চালু হবে বাস সার্ভিস। দক্ষিণের জনপদ হবে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক জোন।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পায়রা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে পটুয়াখালীসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে পটুয়াখালীসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম জানান, পায়রা সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। যদিও কারিগরি জটিলতা ও করোনাভাইরাসের কারণে বেশ কিছুদিন কাজে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু তা কাটিয়ে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এরই মধ্যে মূল সেতুর ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ‘আশা করি, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু।’