জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জি-২০ এর জোরালো সমর্থন কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এফ-২০ ক্লাইমেট সলিউশন সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল সভায় মূল বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহত্তর সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সামাল দিতে শক্তিশালী ও গ্রিন মেকানিজম এবং আপহোল্ড সাসটেইনেবিলিটিসহ তিনটি অগ্রাধিকার ইস্যুও উপস্থাপন করেন তিনি।
১৪ সেপ্টেম্বর এ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। এফ-২০ এবং কিং খালেদ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সপ্তাহের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত অথবা জলবায়ু শরণার্থী ইস্যুতে বৈশ্বিক সমর্থন জোগাতে জি-২০কে বৃহত্তর দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নিরীহ মানুষকে কীভাবে সামাল দিতে পারব তা নির্ভর করছে সবার শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহ তহবিলের (এলডিসিএফ) মতো বৈশ্বিক অর্থায়ন তহবিলে মারাত্মক সম্পদ ঘাটতি অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, জলবায়ু এবং টেকসই পরিবেশ দুটি বিষয় পারস্পরিক নির্ভরশীল এবং বিশ্ব পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ, বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ এবং বিশ্বের মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে জি-২০ অর্থনীতিভুক্ত।
সুতরাং, বৈশ্বিক জলবায়ু এবং টেকসই পরিবেশের যেকোনো ভালো ফলাফলের জন্য জি-২০ এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জি-২০ এর আগে দেখিয়েছে যৌথভাবে তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য অনেক উপকারী পদক্ষেপ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। টেকসই পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ সাম্প তিক বছরগুলোতে বন্যা, বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, ভূমিধস এবং খরার সম্মুখীন হচ্ছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি বলেন, এ কারণে একটি উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ খুবই জরুরি এবং জি-২০ এর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দেয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবশ্যই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে হবে এবং প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে জি-২০ দেশগুলোকে তাদের এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস) পুনরায় সাজানো উচিত।
তিনি বলেন, ব-দ্বীপ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সর্বদাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখানকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে স্মরণাতীত কাল থেকে সক্ষমতার মাধ্যমে টিকে আছে।
বাংলাদেশ এখন অভিযোজন বিষয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক অফিসের আয়োজক হিসেবে একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র যা অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রশমন ও অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ুজনিত বিপর্যয় মোকাবেলায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
সভায় জার্মান অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ স্কলস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. আবদুল্লাহ বেলহাইফ আল নুয়াইমি, কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস প্রমুখ বক্তব্য দেন।
একনেকে ৫৩৪ কোটি টাকার চার প্রকল্প অনুমোদন : দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণসহ চার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অনুমোদিত চার প্রকল্প হচ্ছে- আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট রাজউক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ১৪৭ কোটি টাকা, দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ব্যয় ২০২ কোটি টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।