অক্সিজেনের ন্যূনতম মূল্য ১০০-১২০ টাকা

admin
জানুয়ারি ১৮, ২০২১ ১:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সিলিন্ডার অক্সিজেনের ক্ষেত্রে (প্রতি মিনিট ২ থেকে ৫ লিটারের ফ্লো হিসাবে) এক দিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমে একই ফ্লো’র ক্ষেত্রে এক দিনের জন্য রোগীকে পরিশোধ করতে হবে ১২০ টাকা। অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে পাঠানো এই প্রস্তাব ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনা সংক্রমণকে কেন্দ্র করে দেশে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অক্সিজেনের দাম আদায় করে থাকে। এমনকি মাত্র দুই দিন চার থেকে ৫ ঘণ্টা করে অক্সিজেন গ্রহণ করায় রোগীকে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এই দাম নির্ধারণের ফলে এখন থেকে আর ইচ্ছামতো অক্সিজেনের বিল আদায় করতে পারবে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কিত নির্দেশনায় দেখা যায়, সেখানে একক অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিস্টেমে দৈনিক (প্রতি ২ থেকে ৫ লিটার প্রতি মিনিট হিসাবে) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১১৪ টাকা। প্রতি মিনিট ৬ থেকে ৯ লিটার হিসাবে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ১২৫ টাকা। বিভিন্ন খরচ ও লাভসহ যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১৪১ টাকা। ১০ থেকে ১৫ লিটার হিসাবে প্রতি মিনিট অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৫০ টাকা, যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১৬৪ টাকা।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম (জেনারেটর বেইজড) প্রতি ২ থেকে ৫ লিটার প্রতি মিনিট হিসাবে দৈনিক ব্যবহারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ টাকা। যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১৫০ টাকা। প্রতি মিনিট ৬ থেকে ৯ লিটার হিসাবে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৩০০ টাকা। বিভিন্ন খরচ ও লাভসহ যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ৩২১ টাকা। এবং ১০ থেকে ১৫ লিটার প্রতি মিনিট হিসাবে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৩৫০ টাকা, যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ৩৮০ টাকা।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম (লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বেইজড) প্রতি ২ থেকে ৫ লিটার হিসাবে প্রতি মিনিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ টাকা। যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ১৪০ টাকা। প্রতি মিনিট ৬ থেকে ৯ লিটার হিসাবে অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ২৫০ টাকা। বিভিন্ন খরচ ও লাভসহ যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ২৭১ টাকা। এবং ৩০০ থেকে ১৫ লিটার প্রতি মিনিট অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৩২৫ টাকা, যার প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ৩৮০ টাকা।
এছাড়া হাইফ্লো নেজাল কানুলাসহ সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ৬০ থেকে ৮০ লিটার প্রতি মিনিট হিসাবে এক জন রোগীর এক দিনের ব্যবহৃত অক্সিজেনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) রোগী ছাড়া কোনো রোগীরই টানা এক থেকে দুই ঘণ্টার বেশি অক্সিজেনের দরকার হয় না। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে এক ঘণ্টার অক্সিজেন বিল নিয়ে থাকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসতন্ত্রের রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা জটিল হলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। করোনা রোগীদের অক্সিজেনের উৎস ও সরবরাহের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্দেশিকা প্রকাশ করে ৪ এপ্রিল। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মারাত্মক ও জটিল করোনা রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে এ রকম রোগী থাকেন কমপক্ষে ২০ জন।
অক্সিজেন নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে গণমাধ্যমে উঠে এলে গত ৬ জুলাই ‘১০ কার্যদিবসের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।’ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ওইদিন এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে আরও চার দফা নির্দেশনা দেন আদালত।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘পরবর্তী দশ কার্যদিবসের মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুত এর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে, আদালতের নির্দেশনার পর স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি) পরিচালক সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি চিঠি দেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের আলোকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও রিফিলিংয়ের খুচরা মূল্য নির্ধারণের জন্য সিএমএসডিকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু সিএমএসডি কোনো নীতিনির্ধারণী বা রেগুলেটরি সংস্থা নয়। কোনো পণ্যমূল্য নির্ধারণ সিএমএসডির কর্মপরিধিভুক্ত নয়। তাই সিএমএসডির পক্ষে অক্সিজেন সিলিন্ডার বা রিফিলিং বা কোনো পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করার আইনগত সুযোগ নেই।’
সিএমএসডি পরিচালক চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলে সিএমএসডি কর্তৃক হ্রাসকৃত ১৫ হাজার টাকা হারে অক্সিজেন সিলিন্ডিারের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিতে পারে। অথবা হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নির্ধারিত খুচরা মূল্য সুপারিশসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রেরণ করতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আদালতের নির্দেশনার পর অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি- লিন্ডে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্র্রিয়াল গ্যাস লিমিটেড, স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল লি. ও ইসলাম অক্সিজেন প্রাইভেট লিমিটেড। মেডিকেল অক্সিজেনের বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশ।
কোম্পানিটির দৈনিক গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ টন। চাহিদার ভিত্তিতে মেডিকেল অক্সিজেনসহ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো কিংবা কমানোর সুযোগ রয়েছে তাদের। গত বছর কোম্পানিটি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মেডিকেল গ্যাস বিক্রি করেছে। মেডিকেল গ্যাসের মধ্যে অক্সিজেনের পরিমাণই বেশি।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে অক্সিজেনের একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণে তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। যারা সরকারি হাসপাতালের অক্সিজেনের ব্যয়ের পরিমাণ নিরীক্ষা করে ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি খাতে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ করেছে। যা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এখন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই মূল্যে রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে হবে।